নর্থ কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার উত্তেজনা কি যুদ্ধের দিকেই যাচ্ছে? সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ কিন্তু বেশ উত্তপ্ত পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়। একদিকে কোরিয়া উপকূলে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবহরের অবস্থান অপরদিকে নর্থ কোরিয়ার বিশাল সামরিক বহরের প্রদর্শন; নর্থ কোরিয়াকে রুখতে চীনের সহায়তা কামনা এবং অন্যথায় এককভাবেই কঠোর জবাবের হুঁশিয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের; অপরদিকে নর্থ কোরিয়ার একমাত্র মিত্র চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শঙ্কা, ‘যেকোন সময় যুক্তরাষ্ট্র-নর্থ কোরিয়ার যুদ্ধ বাধতে পারে’, ‘এতে কোন পক্ষই জয়ী হবে না’; আবার যুক্তরাষ্ট্রকে উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বলে নর্থ কোরিয়ার পরমাণু হামলার হুমকি; পুরো ব্যাপারটাই যেনো উত্তরোত্তর আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।

যদিও বর্তমান বিশ্বকাঠামোও যুদ্ধে জড়ানোটা অতিকল্পনা মনে হতেই পারে। কিন্তু একদিকে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প (যিনি সম্প্রতি সিরিয়ায় প্রথম সরাসরি ক্রুস মিসাইল হামলা চালিয়েছেন, আফগানিস্তানে ফেলেছেন সবচেয়ে বড় অপারমাণবিক বোমা) এবং অপরদিকে কিম জং উন (জাতিসংঘসহ বিশ্ব নেতাদের প্রবল আপত্তি-নিন্দা সত্ত্বেও যিনি একের পর ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট ইঞ্জিনের সফল পরীক্ষা চালিয়েই যাচ্ছেন) তখন উদ্বেগ একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায়না।

যুদ্ধংদেহী কর্মকাণ্ডের মধ্যেই উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনা কমাতে রাশিয়ার সহায়তা চেয়েছে চীন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের এক বিবৃতিতে এমনটি জানানো হয়।

এদিকে উত্তর কোরিয়াকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর পদক্ষেপের প্রথম প্রকাশ গত সোমবার। নর্থ কোরিয়ার জলসীমা অভিমুখে যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থাসম্পন্ন নৌবহর পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। এই বিমানবাহী রণতরী কার্ল ভিনসনসহ বেশ কয়েকটি জাহাজ সেখানে পূর্ণ যুদ্ধপ্রস্তুতির অংশ হিসেবেই গেছে, এমনটিও জানানো হয়। আবার নর্থ কোরিয়াও শনিবারের তাদের বিশাল সামরিক প্রদর্শন করে নর্থ কোরিয়ার জনক কিম ইল সুংয়ের ১০৫তম জন্মদিনে, পূর্ণ যুদ্ধের জবাব তারাও পূর্ণ যুদ্ধের মাধ্যমেই দিতে প্রস্তুত।

সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের যুক্তরাষ্ট্র সফরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে নর্থ কোরিয়া বিষয়ে আলোচনা হয় এবং এই বৈঠকের পরেই নৌবহর পাঠানোর নির্দেশ দেয় ট্রাম্প। মার্কিন বহরে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, সামরিক হেলিকপ্টার, দুটি মিসাইল ডেস্ট্রয়ার এবং একটি মিসাইল ক্রুজার রয়েছে। এ রণতরী থেকে বিমান হামলার পাশাপাশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে যে কোনো লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোও সম্ভব। একই সঙ্গে শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা ঠেকাতেও বিশেষ সক্ষমতা আছে এ রণতরীর।

আবার নর্থ কোরিয়া শনিবার বিশাল সামরিক সক্ষমতার প্রদর্শন করে । পিয়ংইয়ং-য়ে আয়োজিত বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজে প্রদর্শিত অস্ত্রাদির মধ্যে ছিলো আন্তঃমহাদেশীয় এবং সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ব্যালেস্টিক মিসাইল। নর্থ কোরিয়ার নেতা কিম জং উন নতুন একটি পরমাণু পরীক্ষার নির্দেশ দিতে পারেন এমন ধারণার মধ্যেই তাদের এমন শক্তিপ্রদর্শন। পরমাণু অস্ত্রাভান্ডার সফলভাবে নির্মাণের খুব কাছেই রয়েছেন নর্থ কোরিয়া, এমন উদ্বেগও রয়েছে।

বিশ্বকে শক্তিমত্তার জানান দেওয়ার দিনে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের প্রতি কঠোর অনমনীয় বার্তাও আসে। দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর কর্মকতা শোয়ে রিয়ং-হায়ে এই অঞ্চলে কোন উস্কানিমূলক কার্যক্রম না চালাতে নিষেধ করেন যুক্তরাষ্ট্রকে। হুঁশিয়ারি দেন, পরমাণু হামলার মাধ্যমেই প্রত্যুত্তর দেওয়ার।

তিনি বলেন, পূর্ণ যুদ্ধের জবাব আমরাও পূর্ণ যুদ্ধের মাধ্যমেই দিতে প্রস্তুত। পরমাণু হামলার জবাবও পরমাণু হামলার মাধ্যেমেই দিবো।

নর্থ কোরিয়ার লক্ষ্য ইন্টারকনন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইলে (আইসিবিএম) পরমাণু ওয়ারহ্যাড স্থাপন, যা বিশ্বের যেকোন প্রান্তে আঘাত হানতে পারে। এই লক্ষ্য অর্জনে তারা এখন পর্যন্ত ৫টি পরমাণু পরীক্ষা এবং বেশ কয়েকবার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। যদিও মিসাইলে ব্যবহারোপযোগী ক্ষুদ্র সংস্করণের পরমাণু ওয়ারহেড নির্মাণের দাবি করেছে পিয়ংইয়ং, তবে পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে বিশেষজ্ঞরা এনিয়ে সন্দিহান।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়্যাং ই আশঙ্কা প্রকাশ করে শুক্রবার বলেন, নর্থ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি চলতে থাকলে যে কোনো মুহূর্তে সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে। সত্যিই যুদ্ধ ছড়িয়ে পরলে কোনো পক্ষই লাভবান হবে না। চীনের অস্বস্তির মধ্যেই ট্রাম্প বৃহস্পতিবার নর্থ কোরিয়ার সমস্যায় নজর দেওয়ার কথা বলেন। বলেন, ‘চীন সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিলে ভালো অন্যথায় আমরা তাদের ছাড়াই সমস্যা সমাধান করবো।’

আবার মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ১০ দিনের এশিয়া সফরে রবিবার নর্থ কোরিয়ার বৈরি প্রতিবেশী সাউথ কোরিয়া যাচ্ছেন। কিম জং খুব বড় ভুল করছে বলেও উল্লেখ করেন ট্রাম্প।

তবে সামরিক শক্তি প্রয়োগের চেয়ে চীনের সাহায্য নিয়েই নর্থ কোরিয়াকে চাপ দিতেই আগ্রহী ট্রাম্প প্রশাসন। দেশটির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাতে এপি এমনটি জানায়।

আবার নর্থ  কোরিয়াকে ঘিরে সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমনে সহযোগিতা চেয়ে চীন-রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে কথা হয়। শুক্রবার রাতে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে টেলিফোন আলাপকালে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, সকল পক্ষকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা দু’দেশের অভিন্ন লক